রোবটিক্স অনেক মজার একটা বিষয়। আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে রোবট ব্যবহার করলে, অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। রোবটের মানুষের মতো শারিরিক বা মানষিক ক্লান্তি নেই, অবিরাম কাজ করতে পারে। তাই পৃথিবী জুড়েই চলছে রোবট নিয়ে গবেষণা। আমাদের দেশেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এবং ব্যক্তিগত উদ্দোগে শুরু হয়েছে রোবটিক্স নিয়ে গবেষণা। আজকে আমরা একটা রোবট কিভাবে কাজ করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করবো।
রোবট কি কি করে?
রোবট কিভাবে কাজ করে বিষয়টি জানার আগে একটা রোবটের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা যাক।
চিন্তা করা যাক, আমাদের একটা রোবট আছে যা কয়েক ধরনের খাবার তৈরি করতে পারে যেমন চিকেন ফ্রাই, চিকেন সুপ, রাইস ইত্যাদি। রোবটটি অনলাইনের মাধ্যমে কমান্ড পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
কোন এক বিকেলে আপনি অফিসে বসে আছেন, এমন সময় আপনার বন্ধু ফোন করে বললো, দোস্ত আমি এক ঘন্টার মধ্যে তোমার বাসায় আসছি, মজা করে দুই বন্ধু মিলে আড্ডা দেয়া যাবে। আপনি চিন্তা করলেন গরম গরম চিকেন ফ্রাই পরিবেশন করে বন্ধুকে চমকে দেবেন।
যেহেতু রোবটটি অনলাইনের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায়, তাই অফিসে বসেই আপনি রোবটকে কমান্ড পাঠিয়ে বলে দিলেন কখন খাবার তৈরি করতে হবে, কি ধরনের খাবার তৈরি করতে হবে।
তবে অবশ্যই আগে থেকেই সমস্ত উপকরণ রোবটিক্স সিস্টেমে দিয়ে রাখতে হবে। আপনার কমান্ড অনুযায়ী সময় মতো চিকেন ফ্রাই প্রস্তুত। বন্ধুর সাথে বাসায় ফিরেই মজা করে পার্টি।
রোবট কিভাবে কাজ করে?
সাধারণত যে কোন রোবটেই কন্ট্রোল সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোকন্ট্রোলার বা মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পরিবর্তন বিবেচনা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাহ্যিক পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করার জন্য A/D কনভার্টার ব্যবহার করা হয়, কারণ মাইক্রোকন্ট্রোলার বা মাইক্রোপ্রসেসর শুধুমাত্র ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেস করতে পারে। একইভাবে প্রসেসিং শেষে এনালগ ডিভাইসকে পরিচালনার জন্য সিগন্যাল তৈরি করতে D/A কনভার্টার ব্যবহার করা হয়। কোন একটা কাজ কখন করতে হবে, কতক্ষণ করতে হবে বিষয় সমূহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টাইমার - কাউন্টার থাকে। বিভিন্ন মুভমেন্ট এবং পজিশন নিয়ন্ত্রণের জন্য মটর ব্যবহার করা। মটর সমূহকে পরিচালনা করার জন্য ড্রাইভার ম্যাকানিজম ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম যেমন আর এফ কমিউনিকেশন, ব্লুটুথ কমিউনিকেশন, ওয়াই ফাই কমিউনিকেশন, ইথারনেট কমিউনিকেশন, জি পি এস, জি এস এম ইত্যাদি।
আমরা যে রোবটটির কথা বর্ণনা করেছি। সেখানে বিভিন্ন চেম্বারে বিভিন্ন উপকরণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে যেমন চিকেন, মসলা, অয়েল, ডিম, ভেজিটেবল ইত্যাদি। বিভিন্ন খাবারের রেসিপি অনুযায়ী মাইক্রোকন্ট্রোলার বা মাইক্রোপ্রসেসরে প্রোগ্রাম করা থাকে। প্রোগ্রাম করার জন্য প্রোগ্রামিং সি, সি+, জাভা, প্রসেসিং, পাইথন এর মতো হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
একটা নির্দিষ্ট খাবার রান্নার জন্য রেসিপি অনুযায়ী বিভিন্ন উপকরণ নির্দিষ্ট পরিমাণে নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। যেমন হতে পারে একটা ফ্রাইং প্যানে প্রথমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অয়েল নেয়া হলো, এক্ষেত্রে প্রোগ্রামে বলা থাকে অয়েল চেম্বারের ভাল্বটি কখন খুলতে হবে, কতক্ষণ পর ভাল্বটি বন্ধ হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অয়েল ফ্রাইং প্যানে থাকবে। একই ভাবে অন্যান্য উপকরণ সমূহ নির্দিষ্ট সময়ে প্রসেসিং চেম্বারে নেয়া হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা আলাদা সেন্সর ব্যবহার করা হয়। দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ইথারনেট বা ওয়াই ফাই কমিউনিকেশন ব্যবহার করা হয়।
ধরুন আপনি অফিস থেকে একটা আপনার সিস্টেমের জন্য নির্ধারিত ওয়েব এপ্লিকেশন ওপেন করে একটা ওয়ার্ক শিডিউল করে কমান্ড পাঠালেন। আপনার কমান্ড সমূহ একটা সার্ভারে পৌছাবে সার্ভার থেকে রোবটিক সিস্টেমকে পরিচালনা করার জন্য সিগন্যাল পাঠাবে। সে অনুযায়ী অন্যান্য ড্রাইভিং ম্যাকানিজম পরিচালিত হয়ে নির্ধারিত কাজটি সমাপ্ত হবে।
নিশ্চয় এতোক্ষণে কোন মজাদার খাবার তৈরি হয়ে গেছে। আজ এপর্যন্তই। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।
No comments
Post a Comment