জ্বর সম্পর্কে জানার আগে জেনে নিই হাইপোথ্যালামাস সম্পর্কে। হাইপোথ্যালামাস মানুষের অগ্রমস্তিষ্কের একটা অংশ। এর অপর নাম হল বডি’স থার্মোস্ট্যাট বা দেহের তাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। এটা শরীরের তাপমাত্রাকে ৩৭’সে(৯৮.৬) এ স্থির রাখে। কোন কারনে এই তাপমাত্রা বেশি হলে তাকে আমরা জ্বর বলি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে -জ্বর কি কোন রোগ নাকি অন্য কিছু? জ্বর অনেক ধরনের আছে, তবে আমি এখানে
সাধারন জ্বরের কথাটাই আলোচনা করব।
ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াগুলো ( এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যাদের কোষপ্রাচীর লিপোপলিস্যাকারাইড দিয়ে গঠিত) যখন আমাদের শরীরের ভিতর কোন ক্ষতিসাধন করতে চায়, তখন আমাদের শরীরের দেহরক্ষী পাহারাদার ফ্যাগোসাইটগুলো (এক ধরনের শ্বেত রক্তকনিকা, যারা জীবাণুগুলোকে ভক্ষন করে মেরে ফেলে) তাদেরকে ভক্ষন করে ফেলে। এখন ডাকাত ব্যাকটেরিয়াতো নিরুপায়। পৃথিবীর সব প্রানীই বাচতে চায়। তাই সে সাথে সাথে এন্ডোটক্সিন নামক একধরনের বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয় যাতে ফ্যাগোসাইটককে সে কাবু করতে পারে। দেহরক্ষী ফ্যাগোসাইটও কম যায়না। সাথে সাথে ফ্যাগোসাইট ওই ডাকাতকে মেরে ফেলার জন্য নিজের শরীর থেকে সাইটোকাইন নামক পদার্থ বের করে দেয়। তখন সাইটোকাইন তাপযন্ত্রের কাছে এই খবরটি পৌছে দেয়। তাপযন্ত্র তো রেগেমেগে খুব গরম হয়ে যায় আর প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক একধরনের পদার্থ বের করে সারা শরীরকে উত্তপ্ত করে ফেলে। শরীরের তাপমাত্রা তখন ৩৭ থেকে বেড়ে ৩৯’সে এ পৌছায়।আর এই অবস্থাটাকে আমরা বলছি “জ্বর”।
যতক্ষণ ব্যাকটেরিয়া না মারা যায়, ততক্ষণ ফ্যাগোসাইটগুলো সাইটোকাইন বের করতে থাকে। একসময় সাইটোকাইন বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর তখন তাপমাত্রা আবার ৩৭’সে এ নেমে আসে।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, জ্বর কোন রোগ নয় বরং এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
রোগপ্রতিরোধ করে কিভাবে?
এই ডাকাত দলের ব্যাকটেরিয়াগুলোর শরীর থেকে নিঃসৃত এন্ডোটক্সিনগুলো শরীরে ডায়রিয়া ঘটাতে পারে, শরীরের রোগপ্রতিরোধী কোষ বা ইমিইনি কনাগুলোকে (লিউকোসাইট, লিম্ফোসাইট, অনুচক্রিকা) ধ্বংস করে ফেলতে পারে। এমনকি এন্ডোটক্সিনের পরিমাণ বেশি হলে হিমোরেজিক শকের মাধ্যমে মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই দেহরক্ষী পাহারাদার ফ্যাগোসাইটগুলো এই কাজটা করে থাকে।
তবে যদি জ্বরের তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই ফিজিসিয়ানের দারে যেতে হবে। আর তাপমাত্রা ৪৩-৪৪’সে এ উন্নীত হলে মৃত্যু এসে দুয়ারে কড়া নাড়বে।
আশা করছি, বুঝাতে পেরেছি। ভালা থাকবেন।
No comments
Post a Comment